সাতক্ষীরায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি

সাতক্ষীরায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি – টানা বৃষ্টি ও বেতনা নদীর রিং বাঁধ ভেঙে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় মৎস্য ও কৃষি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাছচাষি ও কৃষকেরা। ফলে মৎস্য ও কৃষি খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় ও জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।

 

সাতক্ষীরায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি

 

কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে এসব খাতে। টানা বর্ষণে ভেসে গেছে বহু মাছের ঘের, পুকুর ও কৃষকের ফসল। একই সঙ্গে ভেসে গেছে ছয় হাজার মৎস্যঘের ও দেড় হাজার পুকুর। জানা গেছে, তিনদিনের ভারী বর্ষণের কারণে সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশের বেতনা নদীর পাউবোর রিং বাঁধ গত রোববার সন্ধ্যায় ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে।

 

 

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের পুরারবাজার এলাকার সমির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় মাছের ঘের ও বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। বাঁধ ভাঙার কারণে বেশি অসুবিধা হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত ৩১০ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছিলাম, সেই মাছ ভেসে গেছে। আড়াই কোটি থেকে তিন কোটি টাকা বিক্রি হতো কিন্তু এখন ঘেরে কিছুই নেই। এলাকার আরও অনেক ঘের তলিয়ে গেছে। বাড়িতেও পানি উঠেছে। সে কারণে এলাকায় থাকা ও খাওয়ার বেশ সমস্যা হচ্ছে।

একই এলাকার মো. জাবির আলী বলেন, আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আগে একবার বাঁধ বাধা হয়েছিল। কিন্তু আবারও তা ভেঙে যায়। ১০ দিনেও সেই বাঁধ বাধা সম্ভব হয়নি। সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বলেন, আমার ১২০ বিঘা জমির ওপর তিনটি ঘের রয়েছে। সেখানে চাষ করা হয়েছিল সাদামাছ। বৃষ্টিতে সবগুলো ঘের তলিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

উপজেলার আগরদাড়ি ইউনিয়নের কৃষক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি আট বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। এর মধ্যে ছয় বিঘা পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছিল। বৃষ্টির পানি বেড়ে পুরো খেত তলিয়ে গেছে। ধান গাছগুলো পানির নিচে থাকায় পচে গেছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে গাছগুলো সব মারা যাবে।

সাতক্ষীরা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অতিবৃষ্টির কারণে জেলার শ্যামনগর উপজেলা ও সাতক্ষীরা সদরের বেতনা নদীর একটি অংশের বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে আশপাশের ঘেরগুলো পানির সঙ্গে মিশে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের মোট পাঁচ হাজার ২৩০ হেক্টর ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অধিকাংশ মাছ। ফলে মৎস্যচাষিদের ৬০০ কোটি টাকার অধিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে চার কোটি টাকার অধিক। এখন কৃষক ও মৎস্যচাষিদের রক্ষা করতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে কিংবা তাদের প্রণোদনা দেওয়া হলে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারত।

 

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাঁচ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment